নাসিহা

গীবত ও তার পরিণাম

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের পেছনে দোষ বর্ণনা, পরচর্চা ও নিন্দা করা জঘন্যতম অপরাধ। ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে তার দোষত্রুটি আলোচনার নামই হলো গিবত বা পরনিন্দা।

এ গিবত হতে পারে কথায় বা ইশারায় কিংবা লেখনীর মাধ্যমে। গিবত যেভাবেই হোক তা মানুষের দুনিয়া ও পরকালে লাঞ্ছিত হওয়ার অন্যতম কারণ।

গিবত হারাম ও কবিরা গোনাহ। গিবতের মাধ্যমে আল্লাহর হক ও বান্দার হক দুটোই নষ্ট করা হয়। মানবজীবনে পরনিন্দা ও পরচর্চায় পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, বিদ্বেষ জন্মে ও সমাজের শান্তি-শৃংখলা বিনষ্ট হয়। সমাজ সচেতন ব্যক্তিগণ গিবতকারীকে পছন্দ করেন না। গিবতকারীর রয়েছে মারাত্মক আমলি ক্ষতি ও পরকালীন আজাব।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেনঃ

﴿ وَلَا يَغۡتَب بَّعۡضُكُم بَعۡضًاۚ أَيُحِبُّ أَحَدُكُمۡ أَن يَأۡكُلَ لَحۡمَ أَخِيهِ مَيۡتٗا فَكَرِهۡتُمُوهُۚ ﴾ 

“তোমরা একে অপরের যেন গীবত না কর। তোমাদের কেউ কি তার মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ পছন্দ করে? নিশ্চই তোমরা তা অপছন্দ কর”।
[সূরা আল-হুজুরাত, আয়াত: ১২]

আরও ইরশাদ করেনঃ

﴿ وَيْلٌۭ لِّكُلِّ هُمَزَةٍۢ لُّمَزَةٍ  

পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ। 

[সূরা হুমাযাহ, আয়াত: ০১]

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

তুমি যে দোষের কথা বল, তা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তবে তুমি অবশ্যই গীবত করলে, আর তুমি যা বলছো তা যদি তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার ওপর মিথ্যা অপবাদ দিয়েছো। [সহীহ মুসলিম; মিশকাত, হাদীস নং ৪৮২৮]

« مَنْ رَدَّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ رَدَّ اللَّهُ عَنْ وَجْهِهِ النَّارَ يَوْمَ القِيَامَةِ »

“যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের মান-সম্ভ্রমের বিরুদ্ধে কৃত হামলাকে প্রতিহত করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার থেকে জাহান্নামের আগুনকে প্রতিহত করবেন”। [মুসনাদে আহমদ, হাদীস নং ২৭৫৮৩; তিরমিযী, হাদীস নং ১৯৩১]

 

গিবতের ক্ষতি

পরনিন্দা ও গীবত মানুষের আত্মীক শক্তিকে ম্লান করে দেয়। গিবতের কারণে মানবজীবনে পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়, বিদ্বেষ জন্মে ও সমাজের শান্তি-শৃংখলা বিনষ্ট হয়। সমাজ সচেতন ব্যক্তিগণ গিবতকারীকে পছন্দ করেন না। হাদিসে গিবতকারীর তিনটি মারাত্মক ক্ষতির কথা বর্ণিত আছে।

হাদিসে এসেছে- ‘তোমরা গিবত বা পরনিন্দা করা থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ তাতে রয়েছে তিনটি ক্ষতি-

প্রথমত– গিবতকারীর দোয়া কবুল হয় না।

দ্বিতীয়ত– গিবতকারীর কোনো নেক আমল কবুল হয় না এবং

তৃতীয়ত– আমলনামায় তার পাপ বৃদ্ধি হতে থাকে। (বুখারি)

সুতরাং ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক তথা রাষ্ট্রীয় জীবনে আত্মার পরিশুদ্ধতা লাভে গিবত পরিহার করা অত্যন্ত জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গিবতের ভয়াবহতা থেকে হিফাজত করুন। গিবত তথা পরনিন্দা করা থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button