মাসয়ালা-মাসায়েলরামাদান

যাকাতের খাতসমূহ বা যাদেরকে যাকাত দেওয়া যায়

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖفَرِيضَةً مِنَ اللَّهِ ۗوَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ [٩:٦٠]

যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত আদায় কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদে হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যে-ঋণ গ্রস্তদের জন্য , আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। {সূরা তাওবা-৬০}

মোট ৮ ধরণের ব্যক্তিকে যাকাত ও ফিতরা দেয়ার কথা কুরআনে বর্ণিত। যথা-

১- গরীব। যার সম্পদ আছে কিন্তু নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়।

২- মিসকিন। যার একদমই কোন সম্পদ নেই।

৩- ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}

৪- নব মুসলিমদের ইসলামের প্রতি মোহাব্বত বাড়ানোর জন্য উৎসাহমূলক যাকাত প্রদান।

এ বিধানটি রহিত হয়ে গেছে। তাই বর্তমানে কোন ধনী নওমুসলিমকে যাকাত প্রদান জায়েজ নয়। {হিদায়া-১/১৮৪, মাআরিফুল কুরআন-৪/১৭১, তাফসীরে মাযহারী-৪/২৩৫}

৫- দাসমুক্তির জন্য। যেহেতু বর্তমানে দাসপ্রথা নেই। তাই এ খাতটি বাকি নেই।

৬- ঋণগ্রস্তের জন্য।

৭- ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর রাস্তায় কারা আছে? ফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন এতে রয়েছেন-

জিহাদরত মুজাহিদরা। তাদের জিহাদের অস্ত্র ও পাথেয় ক্রয় করার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করবে। হজ্বের সফরে থাকা দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩, হিদায়া-১/১৮৫, রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}

৮- সফররত ব্যক্তিকে। যার টাকা পয়সা আছে বাড়িতে। কোন সফর অবস্থায় অসহায়। তাকে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ।

مصرف الزكاة والعشر هو فقير ومسكين… وهو مصرف لصدقة الفطر والكفارة والنذر وغير ذلك من الصدقات الواجبة، (رد المحتار، كتاب الزكاة، باب المصرف-2/339،

মাসআলাঃগরীব-ফকীর লোককে যাকাত দিতে হবে। ধনী লোককে যাকাত দেওয়া যাবে না। ধনী দুই প্রকার। এক. যার যাকাতের নেসাব পরিমান মাল রয়ছে। এর আলোচনা পূর্বে করা হয়েছে। এমন লোক যাকাত আদায় করবে। দুই. যার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়নি বটে তবে তার প্রয়োজন অতিরিক্ত এমন সম্পদ রয়েছে যার মুল্য যাকাতের নেসাবের মুল্য সমপরিমান। এমন লোকের উপর যাকাত ওয়াজিব নয় তবে ছদকায়ে ফেতর ও কুরবানী ওয়াজিব। উপরোক্ত দুই প্রকার ধনীকেই যাকাত দেওয়া জায়েয নেই।

মাসআলাঃ অমুসলিমকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না।

মাসআলাঃ ঋনী ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হল ঐ ঋনী ব্যক্তির ধন আদায়ের পরে যেন নেসাব পরিমান সম্পদ না থাকে। যদি তার ঋণ আদায়ের পরেও তার নিকট নেসাব পরিমান সম্পদ থাকে তবে তাকে যাকাত দেওয়া জায়েয নেই।
মাসআলাঃ যার নিকট নেসাব পরিমান সম্পদ আছে তাকে যাকাত দিলে আদায় হবে না।

মাসআলাঃ উসূল ও ফুরু কে যাকাত দেওয়া যায় না। উসুল বলতে বুঝায় যাদের মাধ্যমে সে দুনিয়াতে এসেছে। যেমন মা-বাবা, দাদা-দাদী, নানা-নানী পরদাদা-পরদাদী এভাবে যত উপরে উঠবে। ফুরু বলতে বুঝায় ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী, পোত-পুতনী এভাবে যত নিচে নামবে। অর্থাৎ তার মাধ্যমে যারা দুনিয়াতে এসেছে।

মাসআলাঃ দুধ-মা,দুধ-সন্তান ও দুধ-পিতাকে যাকাত দেওয়া যায়।

মাসআলাঃ সৎ-মা, সৎ -পিতা ও সৎ-সন্তানকে যাকাত দেওয়া জায়েয আছে। তারা উসুল বা ফুরুর মধ্য গণ্য হয় না।

মাসআলাঃ মুসাফির ভিনদেশে যখন নিরুপায় হয়ে পড়ে, বাড়ি পর্যন্ত পৌছাতে অক্ষম তখন তাকে যাকাত দেওয়া যায় যদিও সে বাড়ীতে খুব ধনী হয়।

মাসআলাঃ যাকাতের অর্থ কোন গরীবকে মালিক বানিয়ে দেওয়া জরুরী। কাজেই যাকাতের অর্থ দিয়ে মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে দিলে বা তার কোন আসবাব ক্রয় করে দিলে বা যে কোন প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করে দিলে বা মাদ্রাসায় কিতাব ক্রয় করে ওয়াক্ফ করে দিলে বা মৃত বাক্তির ঋন আদায় করলে বা তার কাফনে খরচ করলে যাকাত আদায় হবে না।

মাসআলাঃ মসজিদের ইমাম, মুআয‌যিন মাদ্রাসার শিক্ষক বা যে কোন চাকুরীজীবীকে যাকাতের অর্থ প্রদান করলে যাকাত আদায় হবে না। তবে তারা গরীব হলে ভিন্নভাবে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে।

মাসআলাঃ যাকাতের অর্থ দ্বারা বাড়ি বানিয়ে গরীব লোককে মালিক না বানিয়ে বিনা ভাড়ায় ঐ বাড়িতে বসবাস করতে দেওয়ায় যাকাত আদায় হবে না।

মাসআলাঃ জনকল্যাণমূলক কোন কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন- রাস্তা বা পুল নির্মাণ,কূপ স্থাপন ইত্যাদি।

মাসআলাঃ ভাই-বোন, চাচা-চাচী, মামা-মামী, খালা-খালু, ফুপা-ফুপী, শ্বশুর-শাশুড়ি, জামাই, ভাতিজা-ভাগিনা যদি গরীব হয় তবে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যায়।

মাসআলাঃ স্বামী স্ত্রীকে এবং স্ত্রী স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে না।

মাসআলাঃ যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে লিপ্ত তাদেরকে যাকাত দেওয়া যায়।

মাসআলাঃ নাবালেগ সন্তানের পিতা ধনী হলে ঐ নাবালেগকে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়। তবে বালেগ সন্তান যদি গরীব হয় তাহলে তার পিতা ধনী হলেও তাকে যাকাত দেওয়া যাবে।

মাসআলাঃ সাইয়্যেদ বংশীয়কে যাকাত দেওয়া জায়েয নয়।

মাসআলাঃ সরকার যদি যাকাতের অর্থ মাসআলা জেনে সঠিক খাতে ব্যয় করে তবে সরকারকে যাকাত দেওয়া যায়। অন্যথায় সরকারী ফান্ডে যাকাত দেওয়া যাবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button